সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান বেলাল মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । বেলাল মোহাম্মদ সন্দ্বীপের আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে উনার ভূমিকা ছিল অপরিসীম । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালীন বেলাল মোহাম্মদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র যখন কর্মরত ছিলেন তখন ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে ৭টা ৩০ মিনিটে উনার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে কালুরঘাটের বেতার স্টেশনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার নামে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার নামকরণ করেন । উনার সহকর্মী আবুল কাসেম সন্দ্বীপের অনুরোধে 'বিপ্লবী'শব্দটি যোগ করেন.সেদিনই সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনাপত্র প্রথম পাঠ করেন সন্দ্বীপেরআরও এক কৃতি সন্তান আবুল কাসেম সন্দ্বীপী । বাংলাদেশের মহান মুক্তি যুদ্বে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য উনি নানান পুরস্কারে পুরস্কৃত হন । বেলাল মোহাম্মদ ৩০শে জুলাই,২০১৩ সালে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন.
এবিএম ছিদ্দিক সন্দ্বীপের একজন সুযোগ্য ইতিহাসবিদ ছিলেন । তিঁনি সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে ১৯৩৫ সালের ১২ই নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন বাবার নাম মোহম্মদ ইছমাইল চৌধুরী, মা বেগম আফরোজ চৌধুরী। প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে উনার পিতার চাকরির সুবাদে দেশের ভিবিন্ন জেলায় পড়ার সুযোগ পান । ১৯৫১ সালে তিঁনি সন্দ্বীপ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫৩ সালে ছিদ্দীক চৌধুরী ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজে বিএ ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে বিএ পাশ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি কোর্স সমাপ্ত করেন। জগন্নাথ কলেজ পড়ার সময় রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় উপস্থিত ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি ছিলেন তখন ঐ সময়কার একমাত্র ছাত্র বক্তা। উনার রচিত সন্দ্বীপ সম্পর্কে উল্লেখ যোগ্য মৌলিক গ্রন্থ সমূহ হচ্ছে:
১) শাশ্বত সন্দ্বীপ (১৯৮৮), মুক্তিযুদ্ধে সন্দ্বীপ (১৯৯৮),
২) সন্দ্বীপের বৈচিত্র্যময় লোক সাহিত্য (২০০৪),
৩) সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান যারা আজ নেই (২০০৮),
তাছাড়া আরো সন্দ্বীপ হাই স্কুল এবং নিজ গ্রামের উপরে উনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন । সন্দ্বীপের এই কৃতি সন্তান ১৫ই আগস্ট ২০১৭ সালে সবাইকে ছেড়ে পরলোক গমন করেন । সন্দ্বীপের এইসকল কৃতি সন্তান সন্দ্বীপকে সমগ্র বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কাছে অলংকৃত করেছে বিভিন্ন ভাবে ।
সন্দ্বীপে অনেক খ্যাতমান আলেম জন্মগ্রন করেন তাঁদের মধ্যে মাওলানা ইদ্রিস সন্দ্বীপী অন্যতম । সন্দ্বীপ সহ সমগ্র বাংলাদেশে উনি ইসলামী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা রেখেছেন । সন্দ্বীপের এই খ্যাতমান মনীষীর জন্ম ১৯৩১ সালে সন্দ্বীপের সন্তোষপুর ইউনিয়নে । তাঁর পিতার নাম মুন্সী আব্দুল গনি । উনার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় উনার নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন কেরামতিয়া মাদ্রাসায় । তিনি নোয়াখালীর ইসলামী মাদ্রাসায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে কর্তৃত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) ডিগ্রি অর্জন করেন । এছাড়াও তিনি বিশ্ব বিখ্যাত আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে ইসলামের অনেক গুরত্ব পূর্ন আধ্যাত্মিকতার উচ্চশিখরে পৌঁছান এবং খেলাফত লাভ করেন । কর্ম জীবনে তিনি প্রথমে সন্দ্বীপের দারুল উলুম মাদ্রাসা এবং পরবর্তীতে কাটগড় আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন । পরবর্তী সময়ে তিনি নিজ গ্রামে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন যার নাম বর্তমানে " জামিয়া হোছাইনিয়া কাছেমুল উলুম সন্তোষপুর" । এই প্রতিষ্ঠানে তিনি একনাগাড়ে দুই যুগের বেশি প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব রত ছিলেন । তিঁনি বাংলাদেশের ভিবিন্ন জেলায় কয়েক শত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন । এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ইসলামপুর মাদ্রাসা নরসিংদী , মাদানীনগর মাদ্রাসা ঢাকা কাঁচপুর , জামিয়া উসমানিয়া রাজশাহী । এইসকল মাদ্রাসা গুলো পরিচালনার জন্য উনি একটি তালিমী বোর্ড প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই ইসলাম ও কোরানের শিক্ষায় নিজেকে আলোকিত করেছেন | সন্দ্বীপের এই কৃতি সন্তান ২০০২ সালের ২৫শে নভেম্বর ইন্তেকাল করেন |
সাউথ সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিতিষ্ঠাত মাস্টার এস, এম নুরুল হুদা,
শ্রেণীভেদে সকলকে পান করাতেন অমৃত সুধা। ২০০৭ সালের ৮ই মার্চ এই শিক্ষাণুরাগী মানুষটি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। উনার পিতা মরহুম শেখ আব্দুল্লাহ মুন্সী তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তির উপর ১৯০২ সালে সাতঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে তিনি ১৯৪৭ সালে সাউথ সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
অত্যান্ত সংস্কৃতি মনের শিক্ষক হিসাবে পরিচিত সামসুল আলম স্যার যিনি যথাক্রমে বাংলা এবং ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুলে কর্মরত ছিলেন । এই প্রিয় শিক্ষক এখন আর আমাদের মাঝে নেই ।
শিক্ষাগুরুর ফছিউল আলম স্যার । মধুর বচন ভঙ্গি ও সব বিষয়ে দখল ছিল, একজন শিক্ষাবিদ যার হাত ধরে অনেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়াছেন । উনি সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ।